বাজার - রণবীর পুরকায়স্থ
করমুজকান্দি বাজারের জাতই আলাদা । নতুন জেলা হাইলাকান্দির একমাত্র রবিবারের হাট । বরাক, কুশিয়ারা, ধলেশ্বরীর যখন একটিমাত্র জেলা তখনও করমুজকান্দিই ছিল একমাত্র রবিবারের বাজার ।
এই কাছেই, জানকির বাজারে সারা শনিবার রাতভোর বাজার হয় । দুপুর থেকে হাঞ্জারাত পর্যন্ত সব হাটের যেমন , শনিবারি বাজারেরও আলাদা কিছু নেই। শুধু চেনা পসরার বিকিকিনির সাথে ‘থিথি থরর হ
ই’ অবিরাম শুনতে শুনতে একসময় বাজারের মাঠ শুধু গরুতেই ছেয়ে যায়। বসে
গরুর বাজার । গরুর বাজার,
না চোরের বাজার, ঠগের হাট । তেলগুড় খাইয়ে একপোয়া দুধআলি গাইকে পাঁচসেরি করে দেয়
বেঁচে । নাক কান ছিঁড়ে , ব্যাঙ্কের নথ খুলে চোরাই গরু বেচে দেয় খোলাোখুলি । রাতভোর
বাজারে পুলিশের তৎপরতা থাকে ভাল, আদায়ও হয় ভাল ।
সকাল দশটায় পুলিশের গাড়ি থেকে নামতে
নামতে কনস্টেবল বাবুল মিয়া হাই তুলে। দুই হাত উপরে উঠিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
বলে,
--- হারা রাইত ঘুম নাই আইজ্ঞা। তেও কই, করমুজি
বাজারর জাতঅউ আলেদা ।
হাইলাকান্দি আর
লালা শহরের ঠিক মধ্যবিন্দুতে করমুজি বাজার । সরকারি পরিবহনও রবিবার সকাল বিকাল দুই
খেপ বেশি বাস চালায় । বাজারের কথা মাথায় রেখেই । বাজারের সামনে তো অন্যদিন
দুমিনিটের থামা। বাজারবারে পনের মিনিট পাক্কা! বেশিও হয়ে যায় কখনও। মণির কাকার এক
গেলাস মাগনা চায়ের লোভে দেরি করে দেয় ড্রাইভার । শিলকুড়ির রামুর সিঙাড়া যেমন
বিশুদ্ধতায় বিখ্যাত, কাকার চাও তেমন। কাকা নিজের হাতে গেলাস গরম জলে ধুয়ে এক এক
কাপ করে না ফুটিয়ে চা করে । কাপের মাপে ছোট গেলাসে এক টাকার চা । মণির কাকার চা
খেতে শহুরে মানুষের ভিড়ই হয় বেশি ।
সব বাসগাড়িই কাকার দোকানের সামনে এসে থামে ।
তেপথি মোড়ে থামলে প্যাসেঞ্জার হয় বেশি । বাজারবারে বেশি সময় থেমে থাকায় কেউ খুব
অখুশি নয় । বাজারি, বেপারি , ড্রাইভার, কনডাক্টার, হেন্ডিমেন আর সরকারি নিগম সবাই খুশি ।
চিঁড়ে চ্যাপ্টা
ভিড় , উৎকট গাত্রগন্ধ , আর বাসে উঠেই ‘ছারতায় না নিবা’ হাঁকেই রবিবারি বাজারের শেষ
মজা । ঐ হাঁক যেন হে আল্লা বা হরিস্মরণ ।
কেউ কিছু মনে করে না । ড্রাইভার কন্ডাক্টরও যাত্রীয় জয়যাত্রার আদুরে সম্ভাষণ বলে
মেনে নেয় । কথক তো হেঁকেই নির্বিকার , কোমরে প্যাঁচানো খুতির অবস্থান দেখে রডে হাত
বাড়ায় , হাতে বাঙ থাকলে সিটের নীচে চালান করার চেষ্টা করে , বাজারি মানুষের
গালাগাল খায় , সহ –বেপারির সহানুভূতিও পায় ।
--- অতাউ ইখানোর
মজা , আমার বাড়ি তো স্যার আলগাপুরো, দেখি। ঘুমঘোরে ‘দেখি’ কথাটা আলগা করে বলে
বাবুল কনস্টেবল ।
আলগাপুর,
সরসপুর, মোহনপুর ,কুচিলা এমনকি বাঘবাহার , আইরংমারা থেকেও দল বেঁধে মানুষ বাজার
বাহার দেখতে আসে । দলে দলে রঙ বেরঙের সোয়েটার চাদর জড়ানো মানুষজন । এরা সবাই
ক্রেতা নয় শীতকালের মর্নিং রাইডার এদিকের
লালা রাজ্যেশ্বরপুর ওদিকের হাইলাকান্দির মধ্যবিত্তরা দুরকম বাসে, অটো, স্কুটার,
বন্ধুর বাইকে , উচ্চবিত্তরা নিজের গাড়িতে , গাড়ি ওয়ালা চাকুরেরা অফিসের গাড়িতে ।
অন্যপ্রান্তিক
শহর লালা থেকে আসে হাটের মুখ্য বেপারিরা । ছোট এবং বড় ব্যাবসায়ী । তুলারাম সিপানি,
করমচান্দ সুরানা , ভবানীচরণ এরা আসেন ধোপদুরস্ত ধুতি শার্টের উপর ময়লা বুঝার উপায়
নেই তুষ চাপিয়ে, সরকারি বাসে । হাজি সাহেব আর লাতু মিয়া মাটিতেলের ডিপুআলা,
কাটলিছড়ার বাসে । তাদের হাতে থাকে সাধারণ সুতি কাপড়ের থলে , দামী বেসাতির জিনিষ
কিছুই নেই, আছে শুধু কাগজপত্র । তাগাদার কাজে লাগে
গরিব গুর্বোরাও
হাটের লোভ ছাড়তে পারে না ওরাও আসে । ওদের জন্য ও আছে নানা প্রলোভন । করমুজি
বাজারের যে জাতই আলাদা । এখানে আসতে তাই দাদনদার মহাজনেরা ভোলেন না।
পাশের সব চা
বাগানেই শনিবারে হপ্তা । মানে তলবদিন । কুচুর মুচুর হাড়িয়া মাড়িয়া খেয়েও যা বাঁচে তা
নিয়ে রবিবারের মজা ও হলো, দুপয়সার সওদা হলো, মহাজনরা তো বুঝে শুনে বাকিও দেয় ।
চাষিদের ও তেমন কিছু না থাকলে গান্ধিপোকায় খাওয়া আধপচা লাউ দুটো নিয়েই বাজারে চলে
আসে । বাজারে বাসে আট আনার এক গেলাস সিদ্ধ চা , চার আনার টুস বিস্কুট , একটা
খাওয়ার একটা খাওয়ানোর মোট দুটো বিলাসি বিড়ি চাইই চাই ।
মহাজনেরা
জানেন, খাতককে চোখে চোখে রাখতে হয় । আদায় আশু না হলেও চলে। গরিবরা তাদের শত্রু
ভাবে না । চাষিদের কুলি – কামিনদের সারা
বছরের , পরবের প্রয়োজন মেটাতে এঁরা সদা প্রস্তুত । বাচ্চাদের রঙিন জামা, বৌ
বেটিদের বেলাউজ , আর গামছা ধুতি , লুঙি , অসময়ের নগদ টাকা সবই এরা পায় । ধান উঠলে
বা বোনাস পেয়ে আদায় না করলে বকুনিও খায় কষে । আবারও পায় । সব মহাজনদেরই কল্পতরু
দোকান আছে বাজারে । কর্মচারী চালায়, বেছে বেছে বাকি দেয় । শহরে আড়ত আছে সবার ।
লাতুমিয়ার তো কেরোসিনের ডিলারশিপও আছে । বাজারে তারা সবার সুখ দুঃখের শরিক হতেই
আসেন । গরিবের ভগবান ফেরেস্তারা চেনেন ও সবাইকে বালবাচ্চা সমেত ।
--- মানুষ খারাপ নায় স্যার । এরা জুলুম করে না । আমরার কুনু
কেইছ নাই । বাবুল মিয়া হাতের ডাণ্ডা মুছতে মুছতে বিশেষজ্ঞের মন্তব্য করে ।
এইসব ভগবান
ফেরেস্তাদের পাশাপাশি গাদাগাদি হয়ে গরুর গাড়িতে ছোট ব্যবসায়ীদেরও পসরা আসে। বাজার
সাজিয়ে বসলে শুরু হয় প্রতিযোগিতা । বাকি সময় তো ‘চল থি থি’র তালে সারে সারে দল
বেঁধে চলা । মঙ্গলচণ্ডীপুরের আশে পাশে লালা, কৃষ্ণপুর , কয়া, কাটলিছড়া , নতুনবাজার
,মণিপুর, রাজ্যেশ্বরপুর , ঝাঁপিরবন্দ , গাগলা-ছড়ার হাট ছন্তরেই বেপারিদের সব
বেসাতি , শীত গরম বর্ষায় তেরপাল বাঁধা হয়ে রাতের পর রাত এক বাজার থেকে অন্য বাজারে
ঘুরেই চলেছে ।
‘হের থি থি’র
শব্দে নতুন গাড়ির সারি এসে থামে আজান ডাকের ভোরে । দোকান দখল আর সাজানোর হুড়োহুড়ি
লেগে যায় । তখন আর সারা রাতের আত্মীয় স্রীদামদাকে দাদা মনে হয় না, এক খেলার
শত্রুতায় মেতে যায় সবাই ।
গরুগুলিও চড়ে
খেতে যায় । দল চেনে তারাও । বেড়া ভেঙে ক্ষেতে ঢুকলেও দল বেঁধে ঢুকবে । খোয়াড়ওয়ালা
রামচন্দ্র সাউ সব কটাকে চেনে । ধরে না বন্দোবস্ত আছে বলে ।
--- আমরারও আছে
স্যার। বন্দোবস্ত ।
উর্দিপরা
কনস্টেবল বাবুল মিয়ার সরলতায় উদ্বিগ্ন এ এস আই চক্রধর হাতের লাঠি জিপের বডিতে টং
টং করে । বলে,
--- ওবা ইন্তাজ , চলো বাজার ঘুরিয়া আই , বাবুল চল রে বা ।
নন্দী সাবে গাড়িত থাকি খেয়াল রাখইন ।
তিন পুলিশ
বাজারের দিকে যায় । বাবুল যাওয়ার আগে বলে যায়,
--- বুঝইন অউত্ত তো স্যার। আমরার এড়িয়াত পড়ে ।
ড্রাইভার এন্তাজ
আলি, এএসআই চক্রধর দাশ আর বাবুল মিয়া , এই পুলিশের টিম । ব্যাঙ্ক ম্যানেজার মহাজন
নন্দী এদের বুঝবার চেষ্টা করে । সেই ভোর আটটায় স্টার্ট দিয়েছে , কৃষ্ণপুর, কয়া,
নতুনবাজার , আয়নারখাল ঘুরে ধুলো উড়িয়ে সকাল দশটায় করমুজি বাজারে এসেছে । সারা
রাস্তা কনস্টেবল বাবুল মিয়া একটানা কথা বলে গেছে তার মতো । মহাজন নন্দী ও নিজের
মতো সাজিয়েছে এই হাট আর হাট নিয়ে সব বৃতান্ত ।
সরল কনস্টেবল
ভেবেছে নতুন ম্যানেজার শহুরে মানুষ, গ্রাম চেনে না , জানানো গেল । মহাজন দশ বছর
আগে এই তল্লাটে ,একই শাখায় , ভিন্ন পদে কাজ করে গেছে । সব কিছুই তার বড় চেনা , তবু
বার বার নতুন লাগে। সব নতুন, দৃশ্যে আকারে ঘ্রাণে ।
এএসআই চক্রধর
কী তাকে গাড়ির জিম্মায় রেখে গেল। ধুর! পুলিশের গাড়ির আবার কিসের তত্বাবধান ।
মহাজন গাড়ি
ছেড়ে আয়নাখাল বাগানের দিকে যায় । ফ্যাক্টরির গেট থেকে বাজার শুরু। আঁটি বাঁধা
লাইশাক, ধনিয়াপাতা , আলুপাতা, পালইশাক, হেলাইঞ্চার আঁটি , ভাগা করে ঠুনমানকুনির
সঙ্গে চার টাকা হালির আদাজামির কয়েকটা নিয়ে বাগানের কিশোরী তার লাজুক পশরায় এক
দামের গোঁ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর । ক্রেতারাও দরদাম না করে কিনবে না বলে ওকে এড়িয়ে
যাচ্ছে।
পাশেই কৃষ্ণপুরের বিখ্যাত ফুলকপির ঢেরি
হুড়োহুড়িতে উধাও হয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারির প্রথম রবিবার , উত্তরায়ণের বাকি কদিন ।
লালমূলো একটু কুলীন , সাদামূলো মুখ দেখিয়েছে । মেড়ামেড়ির পর একমাত্র সাদাই চলবে
ফুরিয়ে যাওয়ার আগের কটা দিন ।
আলু পেঁয়াজ ছাড়িয়ে চালের বাজারে নতুন
বৈচিত্র , বিরইন চাল কেনে শহুরেরা । হাকরাইতের জন্য বেছে বেছে চুঙাও কেনা হয় এখান
থেকে । যত কচি তত গন্ধ । সেদ্ধ ভাত খাওয়ার জন্য ভাজা সর্ষের তেল কেনে হুঙ্গিয়া
হুঙ্গিয়া।
ভার, টুকরি ভর্তি করে কমলা রঙের গুয়া আসছে
, যা ঘা আর ভি র হিসেবে বিক্রি হচ্ছে আর মস্ত মস্ত বস্তায় ঢুকছে ।
মশলাপাতিতে এক টাকার সর্ষের তেল , চার আনার লবণ , দশ পয়সার গোটা হলুদের
খদ্দেরই বেশি ।
লইটকা, টেংরা , কেচকি আর ইচার শুটকির সঙ্গে হাঁড়িতে সিদল নিয়ে পাশাপাশি
কয়েকজন দোকানি হাঁকছে, বাংলাদেশি হিদল বাবু ।
সিদল শুটকির দোকানের একপাশে মুড়ির লাড্ডু
, চিড়ার লাড্ডু , গুড়, চিটা , তামাকের দোকান । তামাকের গন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত যায়
।
পিতলের ডাবা , কাঠের ও রাবারের নলে একটি
ফারসি হুক্কা ছিল দাদুর, বাবাও খেয়েছে কিছুদিন, এখন কেউ খায় না । মাঝে মাঝে মহাজন
রবারের নল টায় গন্ধ শোঁকে, শৈশবকে ডাকে। শৈশব জবাব দেয় ‘ গুড় গুড় গুড়র’ ।
খাম্বিরা তামাকের অহংকারী গন্ধ মহাজনকে
আবিষ্ট করে রাখে অনেকক্ষণ। এত বেশি কেজো হয়ে গেছে জীবন , মহাজন অবাক হয় , ভাবে এক
বছর হল পোস্টিং পেয়েছে , কোথাও বেরয় নি । কত পরিচিত এলাকা তার ।
ছোটবেলায় আয়নারখাল বাগানে এসে থেকেছে ।
ভুলু মামার বাড়ি গেছে ভিসিংসায় । বড় মামার বাইণ্ডার ছিল ভুলু মামা , ভুলু মিয়া ।
সে সব তো বড় হয়ে জেনেছে । সে জানত ভুলুমামা বড়মামারই এক ভাই। জানত না ভুলু মামাকে
কেন কলাই করা থালায় আর এনামেল গ্লাসে একা একা ভাত খেতে দেওয়া হয় । ওর বাসন ওকেই
ধুয়ে রাখতে হয় ।
হাইলাকান্দির শৈশব ভিসিংসায় বেড়াতে যাওয়ার মতো , বিশ্বনাথ টকিজে নীলাচলে
মহাপ্রভু দেখা , ধলেশ্বরী নামের স্বল্পতোয়া নদীটিকে শুধু নামের গুণে ভাল লাগা, আর
ছোটমামার পাঠশালা , কখনও দেখে নি তবুও নিশ্চিন্তপুর পাঠশালাটি বড় প্রিয় ছিল তার ।
হার্বাটগঞ্জ বাজার । বিকেলের বাজার দেখা
শুরু হয় পুলের রেলিং এ উঠে, বাজারময় সাদা মাথার মেলা । তকি মাথায় মুসলমান হাটুরের
সংখ্যাই বেশি
ছিল তখন । মাছ মাংস ওজন করে কিনত না
কেউ । ছোট মাছের ভাগা আর বড় বলতে তো রুই কাতলার পেটি আর গজের চাকা । ছিল তুষের উপর বসানো সাদা
সাদা বড় হাঁসের ডিম আর ছোট মেটে রঙের মুরগির ডিম , দেশিই সব । হিন্দুবাড়িতে তখন
সরাসরি মুরগি বা মুরগির ডিম কেনার রেওয়াজ ছিল না । উঠনের লুকনো কোণে ভুলুমামার
তদারকি আর বাসন বর্তনের যোগানে বড় মামা রান্না করতেন, মুরগির ঝোল আর কলাপাতায় ভাত
। সে এক মোচ্ছব হতো ।
--- স্যার, ছাওয়াত গিয়া বইন , আমরা অখনঅউ আইয়ার, সাইকেল দেখলেউ স্যার... ।
বাকিটা ইশারায় বুঝিয়ে দেয় । শুধু এই কথাটি বলার জন্য বাবুল মিয়ার উদয় ও
অন্তর্ধান ।
মহাজন ছায়া খোঁজে । জিপটার কাছাকাছি ফিরে এসেছে আবার । সামনেই নেপাল
মাস্টরের চায়ের দোকান। বাঁশের নড়বড়ে বেঞ্চি দুটো দোকানের দুপাশে । মহাজন তারই
একটিতে বসে ফাৎনায় মনোনিবেশ করে , হারানো সাইকেল খোঁজে ।
পুলিশও খুব মজা করছে সেই সকাল থেকে । এন্তাজ আলি যে এমন একটা ঘটনা ঘটিয়ে
দেবে ভাবতে পারে নি মহাজন । কাণ্ড তো কী একটা সাইকেল চুরির তদন্তে গোটা মহকুমা
তোলপাড় করে তুলে এক বেলায় ।
--- ওই বেটার সাইকেল দেখইন স্যার ।
নেপাল মাস্টর বলে। নেপাল মাস্টর চাওলাও জেনে
গেছে তার সাইকেল হারানোর গল্প । চায়ের কাপ হাতে মহাজন সাইকেল আরোহীকে দেখে । তার
নয়, এক মণিপুরি হাটুরের নিজের বাহন । উৎসুক নেপাল হোটেলওয়ালাকে হতাশ করে মহাজন ।
সাইকেলের কথা আর ভাবতে চাইছে না মহাজন, আলাদা জাতের এই বাজারটা তাকে
আচ্ছন্ন করে রেখেছে ।
--- আইচ্ছা মাস্টর ইখানো মাছর বাজার বয় না ।
মহাজনের কথার জবাবে মাথা নাড়ে নেপাল । তারপর ভুড়ুৎ করে নাক ঝেড়ে লুঙিতে মুখ
মুছে নেপাল জ্ঞননিষ্ঠের মতো জানায় ,
--- না স্যার, মাছ ইখানো কে কিনত , সব তো বাগানর কুলি আর গাউর লেংটা লুংটা
মানুষ । অই ডালাত করি ইচা পুটি মকার ভাগা লইয়া বই রইছে দুই একজন । বাজার তো হইল হউ
, আপনারা যার টানে আইন ।
--- মুরগি নি।
--- না স্যার, ই বাজারর জাত অউ আলাদা । ই বাজারর জাত অইল তার পাঠা আর ছাগল
। যাইন না ,দেখিয়া আইন । দেখলেউ কিনার হাউস অইব ।
যাবে বলে এগোয় । ইতিমধ্যে একটা লোক মরা মুরগি একটা, কেজি দেড়একের হবে ,
নেপালের রান্না ঘরের সন্তর্পণে রেখে দেয় । একটা লেনদেনও হয় । মহাজন দেখে
হোটেলওয়ালা লোকটাকে একটা পাঁচ টাকার নোট দেয় ।
গ্রাম দরিদ্রের সব স্নেহের পুত্তলি, ছাগশিশুতে ছেয়ে আছে বাজারের বড় অংশ ।
সাদা, কালো আর পিংলা রঙের মুখ্যত । একজনকে চিনতে পারে মহাজন, ধনু মিয়া, আরটিও লোনি
। ট্রাক নিয়েছে ছমাস হলো , শোধ দেয়নি একটি কিস্তিও । কুচিলা থেকে এসেছে বোনের
বিয়ের পাঁঠা ছাগল কিনতে । .
--- ইখানো খুব সস্তা স্যার , কিনঅইন না একটা ।
--- কিনতাম তো বা, তে নিমু কেমনে ?
--- আপনার তো পুলিশর গাড়ি অউ আছে । তারা না নিলে আমি পউছাই দিয়া আইমু নে । মকবুলদা, স্যারর লাগি
একটা কচি দেখি দেও । জান নি
তাইন কে ।
--- ওবা ধনু ।
--- না স্যারে, ইতা ঠগ হাবুগুলি ।
একটু ডর দেখানি লাগে । একটু কম নিব । এমনেউ দাম বেশি নায় , আশি টেকার উপরে দিবা না
। মাছও খুব দাম আইজ কাইল । জানইন নি স্যার , ই বাজারর নাম আমার এক বুজুর্গর নামে ।
ঠাকুরদার দাদু, করমুজ মিয়া ।
ধান্দাবাজ ছেলেটির হাত থেকে ছাড়া
পেতেই উল্টো দিকের গাছতলার একটি কালো নধর বাচ্চা পাঁঠা নেড়ে চেড়ে দেখে মহাজন ।
তখনই , তার ঘাড়ের উপর শ্বাস ফেলে এক ধূসর জিনস প্যান্ট জ্যাকেট পরিহিত সুপুরুষ ।
যার মুখশ্রীর খুঁত তার সামনের পাটির দুটো দাঁতে ফাঁকা জমি । মুচকি হাসিতে নিজের
পরিচয় দেয় রোদ চশমা হাতের মানুষটি ।
--- মিস্টার এফ এ বড়ভূইঞা , এএসইবির এসডিও, এলিয়াস ফকির আহমেদ ওরফে রুপাই
মিয়া আর্টিস্ট । আর আপনে, মানে তুই । তুই একটা কালা পাঠা ।
অবাক আনন্দের অভিব্যক্তি মহাজনের ।
বন্ধুকে দেখে । বন্ধু বলে,
--- তুইন বেটা মাজন , করমুজিত তর কিতা কারবার ।
রুপাই জানে না মহাজন আবার বদলি হয়ে মঙ্গলচণ্ডীপুর চলে এসেছে । এরকম তো হয়
না একই জায়গায় দুই টার্মে খুব কম বদলি হয় । মহাজন জানায় সব বৃতান্ত বন্ধুকে । এক
বন্ধুর হাতে কাঁঠালপাতার কিতা আর আর একজনের হাতে ছাগলবাচ্চার গলায় বাঁধা দড়ি ।
ধনুমিয়া মহাজনের হাত থেকে কৃষ্ণবর্ণ ছাগ শিশুটিকে উদ্ধার করে । বলে,
--- স্যার বাড়ি পৌছাই দিয়া আইয়ার ।
--- আরে কিতা মাতো বা । দরদাম করলাম না , কিনলাম
না , বাড়িত দিয়া আইতায় কিতা ! আর তুমি যাইবায় একদিকে আমি যাইমু উল্টা ।
মহাজনকে আশ্বস্ত করে অবিশ্বস্ত আরটিও লোনি ছোকরা জানায় ,
--- ইতা ভাবইন না যে স্যার , আপনার গাড়ি তো রইছে আমার কাছে ।
মহাজন বুঝে অকৃতজ্ঞ ব্যাঙ্কঋণী তার বন্ধকের গাড়ি স্যারের উপকারে লাগাতে চায়
। তাই বলে,
--- হি নায় অইব , দাম ফুরাও ।
--- ইতা অই যাইব স্যার, একলগে অতটাইন কিনিয়ার ।
--- কেনে আমারটা মাগনা নি ।
মহাজনকে বিরক্ত হতে দেখে ফকির আহমেদ ইঞ্জিনিয়ার পাশ থেকে বন্ধুকে সমঝোতার
শর্ত দেয় বলে,
--- পছন্দ অইলে কিনিলা , পৌছানির প্রবলেম অইত
নায়, অনুকূল তরে পৌছাই দিয়া আইব নে পাঠার লগে ।
--- অনুকূল কে বে ।
--- আমার ড্রাইভার ।
--- আর তুই যাইতে নায় ? তে আর পাঠা কিনলাম কেনে ।
--- তবা তবা । তর ইতা ছেদ মারা গোস্ত খাইমু নি আমি ।
--- আইচ্ছা অইব নে , অখন রায়ট লাগাইছ না । আইবায় তো বা বড়ো ভুইয়া ।
মহাজন নন্দী চরাচর লুপ্ত অবস্থায় বন্ধুর মুখের দুটো দাঁতহীন গহ্বরের দিকে
তাকিয়ে শুনে খাম্বিরা তামাকের ডাক ।
দাদুর ফারসি হুক্কার জলভর্তি ডাবায় উথাল পাথাল মন্দ্রধ্বনির ডাক শুনে ‘গুড় গুড়
গুড়র’ ।
পুলিশ, পুলিশের গাড়ি , হারানো সাইকেল , চক্রাকারে ঘুরে আসা ধুলোউড়ি পথ, মরা
মুরগি, কচি পাঁঠা সবই এক অপ্রতিম প্রভায় দেবদেহে যেন লীন হয়ে যাচ্ছে । যে ছিল তার বাল্যসখা , বন্ধু থেকে
ক্রমশ নিয়েছে ব্যাপ্তি । বাঙালির ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে বারো ভুইয়ার এক ভুইয়া হয়ে ।
--- বড়ো ভুইয়া কইয়া ইয়ার্কি মারিও না , আমরার ধমনীত বারো ভুইঞার রক্ত বর রে
মাজন ।
সদঅর্থেই অনেক ফুটানি দাপদাপিয়ে বেড়ায় রুপাই । দুটো দাঁতহীন গহ্বরও তার এক
সত্য গোঁয়ার্তুমির ওয়ারিশান ।
বছর দশেক আগে , বয়স তখন দশ বছরের ছোট । তিরিশ ছোঁয়া এক বিপজ্জনক কাল ।
ধর্মে সইবে না এমন কাজ করতে গিয়ে, সখের চিত্রকর তার দুটো , সামনের পাটির দাঁত হারালো
। কী সব ছবি । একটায় ,
ঘরের মেয়ে বউ হয়ে বেঘরে যাচ্ছে , এক খাঁচা থেকে অন্য খাঁচায় পাঠানোর
ট্র্যান্সফার ফী বা দালালি ফী নিচ্ছে
ধর্মীয় নেতা ।
দুই খানদানি তেল ঘিএ লুতুপুতু ভুঁড়ির
মাঝখানে শীর্ণকায় নামাজির চেপ্টে যাওয়ার দলিল ।
সোনাই শহরে এমন প্রদর্শনী শুধু রুপাই
মিয়াই করতে পারে দাঁত খোয়ানোর জন্য । ছুটির দিনে মহাজন নন্দীকে পাঁঠা কেনায়
উৎসাহিত করে রুপাই মিয়া ওরফে ফকির আহমেদ বড় ভুইঞা , তার ডাকাবুকো বাল্যবন্ধু বলে ,
সরকারি আলো নিগমে চাকরি করে । বলে, অন্ধকার মেরে আলোর উৎস রক্ষা করাই কাজ । বলে,
আঁধার মহিষকে কটাতে গিয়ে নিজেও কাটা পড়তে পারি কোনদিন, তো ক্যা । মহাজন বন্ধুর এসব
গোঁয়ার্তুমির কথায় ভয় পায় । বন্ধুর
জন্য
গর্বও হয় আবার ভয়ও হয় । তাই ঘোর লাগা বোকা বন্ধু বেমুতালিক একটা প্রশ্ন করে বসে ,
--- আইচ্ছা বেটা, অইছে । অখন দাত দুইটা
বান্দাইলা । বান্দাইতে না নি ।
মহাজন
জানে দাঁত না বাঁধানোতেই রুপাই মিয়ার বরফুটানি ।
অগূঢ়
কথাটা বলে ফেলে স্বভূমে ফিরে আসে মহাজন । ধনুমিয়াকে উপেক্ষা করে সরাসরি পাঁঠার
মালিককে বলে,
--- কতত
দিবায় কইলাও । কালা বাইচ্চা ইটা । একশ , এক কতা, দিলাও ।
পাঁঠার মালিকানা
নিয়ে বন্ধুর দিকে ফেরে , বলে,
--- দেখ
ফকির , তোর লাগি ধনী মাজন বেটার অতটাইন টেকা গেল , অখন তোর অনুকূল মহারাজ রে দিয়া
গাড়িত উঠা আর চল মঙ্গলচণ্ডীপুর ।
মহাজনের দরাদরিতে কাজ হয় না ।
পাঁঠার দাম দিতে হয় দেড় শো টাকাই ।
কথা ঠিক হয় অনুকূল ও তার প্রভু বিকেলের আগেই
মঙ্গলচণ্ডীপুর পৌঁছবে । কারণ এসডিও সাহেবের বিভাগে আলোর বিতরণ নিয়ে ভজকট সামলাতে
দুপুর গড়িয়ে যাবে ।
স্থির হয়, পাঁঠা যাবে পুলিশের গাড়িতে ।
পুলিশ বাহিনিও মহাজনকে পাঁঠা কিনতে দেখে দাঁড়িয়ে
পড়ে । চক্রধর বলে,
--- কিনলা
নি ।
মহাজনের সম্মতি পেয়ে পাঠাওলাকে ধমকায় এএসআই ।
বলে,
--- নতুন মানুষ পাইয়া খুব ঠগাইলে বেটা । পাঠা
ছাগল বেচার লাইসেন আছে
নি তোর,
দেখা ।
লোকটি জোড়
হাত করে বলে,
--- তুলা দিছি বাবু
--- হুঁ ।
যা গাড়িত উঠাইয়া দিয়া আয়, বালা করি বান্দিছ । মেনেজার বাবু চলঅইন ।
--- যাইন , আইয়ার , বন্ধুরে তো নিমন্ত্রণ করলাম
, বাড়ির ঠিকানা তো দেওন লাগব ।
এতক্ষণের
রসিক মানুষটি পুলিশ দেখে রসের ধারায় ঘন হয়, হয় তির্যক । বলে,
--- তুই যা, আমি বার করি লাইমু । ছোট শহরো
দারোগারে চিনে চুরেয়ার ড্রাইভারে । কিন্তু হক্কলে চিনে পোস্টমাস্টর, ষ্টেশনমাস্টর
আর হেড মাস্টর রে , ব্যাঙ্ক মাস্টররে ও চিনে ।
--- না রে বা আমার খুব লো প্রফাইল । এক বছরর তো
ডেরাডাণ্ডা । আগে আছলাম মেছো । অখন সংসারী মাইনষর কোয়ার্টার অইছে ।
---লো না হাই তো দেখিয়ার । পুলিশ লইয়া ঘুররে
এক পাশশ টেকার সাইকেলর লাগি।
--- ব্যাঙ্ক র সাইকেল বেটা ।
--- বুঝছি , অখন দেখবে নে চোররে তো ধরত নায়,
খামকা কুনু নিরপরাধরে ধরব । দেখিছ ছাইকেল পাইতে নায় ।
--- ইতা বাদ দে পাইলে পাইলাম নাইলে না । রেকর্ড
রইল পুলিশর লগে তো ঘুরলাম । অখন ক কেমনে আইবে আমার বাড়িত ।
--- চিনি নি কুনু , বার করিলাইমু ।
--- পারতে
নায়, তিন রকমের পথ আছে ।
--- ক, এক নম্বর ।
---
চন্দ্রপুর দিয়া ঢুকি যাইছ । মসজিদর ধারে দি রাস্তা ।
--- দুই
নম্বর।
--- ষ্টেশন
পার অইয়া , মাধব মন্দিরের সামনে ব্যাঙ্ক , কাচা রাস্তা পার অই যাওন লাগব । পার্কিং
পাইবে ব্যাঙ্কর সামনে ।
--- তিন।
--- ই এক
আতান্তরি পথ । পটাপট যাওয়া যায় । লেভেল ক্রুশিং দিয়া দুই মিনিটর হাটাপথ । কলেজ পার
অইলেউ কবরখানা কালীবাড়ি । দুই কমিটিয়ে মারামারি , তুই ভুলেও যাইছ না । তুই গেলউ
রায়ট লাগাই দিবে ।
--- তে তো যাইমু ।
রুপাই
মিয়া একদিকে , পুলিশের গাড়ি আমলার দিকে ধূলো উরিয়ে বাজার ছাড়ে।
পাঁঠা
চেচায় বাবুল মিয়া বলে,
--- বেশি
না স্যার , তিন কেজির বেশি অইত নায় গোস্ত । দাম কমউ নিছে দেড়শো নানি । চক্রধর বলে,
--- ইঞ্জিনিয়ার আপনার বন্ধু ।
--- অয়
দেখলা তো । আপনারেও চিনঅইন ।
--- চিনন
লাগে । রুপাই মিয়া ই জিলার বড় বিপজ্জনক ব্যাক্তিত্ব , কনটিনজেণ্ট লায়বেলিটি । আসামি নায়, আবার যে কুনু সময় ... আপনার বাল্য
বন্ধু তো, কইন না কেনে ?
--- কিতা
কইতাম ।
---
ইন্তাজ, একটু আস্তে যাও চাইন বা ।
আমালার পুলের কাছে এসে চক্রধর গাড়ি থামাতে বলে।
কয়েকটা সাইকেল জড়ো করা এক জায়গায়
।
--- দেখি লাইন, এর মাঝে আসে নি আপনার । আমরা
একটু আই গিয়া , ইনকাম আছে ।
বাবুল মিয়া যাওয়ার আগে মহাজনকে জানিয়ে যায়
বার্তা । ভিডিও শো হচ্ছে ভেতরে, বাইরে সাইকেল রেখে গেছে। কাঁচা ঘরটায় যেখানে শো
হচ্ছে ঢুকে যায় তিনজনে ।
গোটা পনের সাইকেল , একটা একটা করে দেখে
মহাজন, আর পুলিশ বাহিনির উপর কৃতজ্ঞতায় অভিভূত হয় । কৃষ্ণপুর, নতুনবাজার, কয়া হয়ে
এত ঘুরে , কাঁচা পাকা এবড়ো খেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে শুধু ব্যাঙ্ক এর এক সাইকেলের জন্য
এত করল । সাইকেলটা ব্যাঙ্কের হলে কী হয় , নিয়ে তো বেরিয়েছিল মহাজন ।
রবিবার এত ভোরে ব্যাঙ্ক এর সাইকেল নিয়ে কেন
বেরবে , ম্যানেজারের সাইকেলের কী দরকার । ওর কাছ থেকেই তো উশুল করবে ব্যাঙ্ক ।
করলেও, কতই বা দাম , এর জন্য পুলিশ এত করবে ।
এন্তাজ ড্রাইভার মহাজনের উপর খুব কৃতজ্ঞ , ওর
বাবার কিছু টাকা ছিল শিলচর শাখায়,
হেয়ারশিপ সার্টিফিকেটের ঝামেলায় টাকা পাচ্ছে না, মহাজন ব্যবস্থা একটা করে দিয়েছে ।
টাকা পেয়েও যাবে এন্তাজ ।
বাবুল মিয়া মহাজনকে বলে,
--- চলঅইন স্যার , ইখানো পাওয়া যাইত নায় ,
ইখানো দিনর বেলা অন্য
লীলা ।
--- বাবুল
।
চক্রধর ধমকের ডাক দেয় ।
চক্রধর
গম্ভীর মানুষ। বলে,
--- পাওয়া
যাইত না কেনে , অত সাইকেল ইখানো, একটা উঠাই লাও বাবুল ।
--- না না
। আপনারা অত করছইন ।
--- আমরা আর কিতা, করছে ইন্তাজে । গগৈ দারোগায়
কইলে কিতা অইব , এন্তাজেরে কিতা জাদু করছইন, হে গাড়ি বার না করলে অইল না নে ।
পুলিশ এক সাইকেলর লাগি অততা ক্রী না ।
ব্যাঙ্ক এর সামনে গাড়ি থামায় ইন্তাজ আলি ।
কালা দাঁড়িয়েছিল মাধবমন্দিরের সামনে ।
মহাজনকে দেখে দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে আসে ওপার থেকে । বলে,
--- সাইকেল পাওয়া গেছে আইজ্ঞা ।
হারানো প্রাপ্তির খুশিতে কালার কণ্ঠে হাঁপ
।
মহাজনের গলায়ও । খুশি উৎসুক হয়ে বলে,
--- কই পাওয়া গেল বে ।
--- আপনেউ রাখি আইছলা সুবুদদার চার দুকানো । আমি
গিয়া আনছি ।
--- বালা করচছ , অউ নে ।
মহাজন কালাকে খুশির বখশিস দিতে পকেটে হাত দেয় ।
--- কিতা কররা স্যার ।
তিনজন পুলিশ কর্মীই একসাথে বাধা দেয় মহাজনকে । চক্রধর
ছোট দারোগা বলে,
--- ইগু কিগু কইন চাইন ।
--- হে কালা , ব্যাঙ্কর জমাদারর পুয়া , আমার
বাড়িত কাম করে ।
--- হি তো বুঝলাম । বাবুল চিনরায় নি বা ।
এবার
বাবুলের পালা । বলে,
--- অয়
স্যার ইগুঅউত্ত একবার তিনদিন আছিল হাজতো । বিধুবাবুর বাড়িত চুরি করছিল ।
নিশ্চিন্ত হয়ে চক্রধর ফরমান দেয়,
--- উঠ উঠ , উঠাও ইগুরে ।
অসহায় মহাজন তার ভাল পুলিশ দলকে অনুনয় করে ,
--- দেখইন চক্রধর বাবু , হে অখন বালা অই গেছে ,
আমার বাড়িত থাকে তো , সব সময় দেখি , হে চুরি করছে না , ছাড়ি দেইন ।
--- ইতারে আপনে চিনঅইন না স্যার , হাড়ে হাড়ে
বদমাইশ , পুলিশরে একটু কাম করতে দেইন না ।
পুলিশ বাহিনি হঠাৎই তৎপর হয়ে ওঠে ।
--- আমি
জামিন চাইলে দিবা নি। ছেলেটা আমার লাগ... প্লিজ চক্রধর বাবু ।
মহাজন ছোট দারোগার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে ।
--- কইরা যখন, ঠিক আছে , একটু লাড়ি চাড়ি ছাড়ি
দিমু , ভাবঅইন না যেন।
ছাড়ি দিমু
একবার বাবুল আইয়া আপনার একটা সই লই যাইব ।
চক্রধরের
আদালতের রায় পাল্টায় না ।
পাঁঠা
নামে, কালা ওঠে ।
শিকড়ের সন্ধানে -২
পূর্বদেশ গল্পপত্র
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন